বৃহস্পতিবার, ২২শে মে, ২০২৫
৮ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২

অবশেষে কলকাতায় চিকিৎসকদের অবস্থান কর্মসূচির সমাপ্তি

অনলাইন ডেস্ক: অবশেষে দীর্ঘ ৪৩ দিন পর আন্দোলনের পথ ছেড়ে কর্মক্ষেত্রে ফিরে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের জুনিয়র চিকিৎসকরা। তবে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, তারা আন্দোলনের রাস্তা থেকে সরে আসছেন না। দরকার হলে তারা আবার সম্পূর্ণ কর্মবিরতিতে যাবেন। ২৭ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টের শুনানির দিকে নজর থাকবে বলেও জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। দাবি পূরণ না হলে তারা আবার কর্মবিরতিতে ফিরে যাবেন।

কলকাতার আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে এক নারী চিকিৎসককে নৃশংসভাবে ধর্ষণের পর খুনের ঘটনায় ফুঁসে উঠেছিলো গোটা পশ্চিমবঙ্গ। এই জঘন্য ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে আন্দোলনে নামে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষরা। সমর্থন জানিয়ে রাজপথ গরম করেছিলো প্রধান বিরোধী দল বিজেপি। সেই সঙ্গে টানা চলেছে নারীদের রাত দখলের বৈচিত্র্যধর্মী কর্মসূচিতে।

পাশাপাশি গত ৯ আগস্ট থেকে কর্মবিরতির সঙ্গে বিভিন্ন ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করে জুনিয়র চিকিৎসকরা। যা শেষ হলো শুক্রবার। এই ৪৩ দিনে জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলন নানা বাঁক নিয়েছে। আরজি কর হাসপাতাল চত্বর, লালবাজারের অদূরে ফিয়ার্স লেন থেকে সেই কর্মসূচি গড়ায় সল্টলেকের স্বাস্থ্য ভবনের সামনের রাস্তায়। ১০ দিন ধরে চলেছে টানা অবস্থান। যা শুক্রবার দুপুর তিনটায় শেষ হয়।

আরজি কর হাসপাতালে নারী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের পদত্যাগের দাবিতে এই কর্মসূচিতে চালিয়ে আসছিলেন আন্দোলনকারী জুনিয়র চিকিৎসকরা। তখন তাদের নিশানায় ছিলো রাজ্য সরকার। কিন্তু যখন নিজেদের দাবি পূরণের পর কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে কাজে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত হলো, তখন তাদের আক্রমণের তীর ঘুরে গেল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার দিকে।

শুক্রবার স্বাস্থ্যভবনের সামনে থেকে সিজিও কমপ্লেক্স পর্যন্ত জুনিয়র চিকিৎসকদের মিছিলে শোনা গেল অন্য স্লোগান- ‘আর কতদিন সময় চাই? জবাব দাও সিবিআই’। এর আগে গত ৯ সেপ্টেম্বর, আরজি কর কাণ্ডের শুনানিতে জুনিয়র চিকিৎসকদের কাজে ফেরার সময় বেঁধে দেয় সুপ্রিমকোর্ট। কর্মবিরতি তুলে নিতে আবেদন জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। কিন্তু তাতেও চিড়ে ভেজেনি।

পালটা রাজ্যকেই ডেডলাইন বেঁধে দেন আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসকরা। মঙ্গলবার বিকেল ৫টার মধ্যে তাঁদের পাঁচ দাবি মানতে হবে। যার মধ্যে অন্যতম ছিল স্বাস্থ্যসচিব, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, প্রধান স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মকর্তার পদত্যাগ। স্বাস্থ্যভবনে অবস্থানের ১১ দিন পর সব দাবি মেনে নেন মমতা। ফলে অবস্থান বিক্ষোভে ইতি পড়ে। তবে স্বাস্থ্যভবন থেকে সিজিও কমপ্লেক্স পর্যন্ত মিছিল করেন জুনিয়র চিকিৎসকরা।

সিবিআইয়ের কাছে জবাব চেয়ে স্লোগান তুলেন জুনিয়র ডাক্তাররা। তাদের সুরে সুর মেলালেন সিনিয়ররাও। শোনা গেল ‘আর কত দিন সময় চাই? জবাব দাও সিবিআই’। আরও শোনা গেছে- ‘সন্দীপ ঘোষ কার ভাই? সিবিআই সিবিআই’। এর আগে নিজেদের দাবি আদায়ে পাঁচবার সরকার পক্ষের সঙ্গে বৈঠকে করেছে জুনিয়র ডাক্তাররা। সবগুলো বৈঠক বিফলে যাবার পর মমতা ডাক্তারদের পাঁচটি দাবিই মেনে নেন।

তবে আন্দোলন পুরোপুরি তুলে নেননি জুনিয়র চিকিৎসকরা। আংশিকভাবে কাজে ফেরার ঘোষণা দিয়েছেন তারা। শুক্রবারই তারা বিধাননগরে স্বাস্থ্যভবনের কাছ থেকে অবস্থান-বিক্ষোভে ইতি টেনে মিছিল করে তারা নিজেদের জায়গায় ফিরে গেছেন। তবে একটি অংশ গেছে সিবিআই দপ্তরের দিকে। কর্মস্থলে ফিরে যে সব জায়গায় কাজে যোগ দেয়া খুব জরুরি, সেখানে তারা কাজ শুরু করেছেন।

আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে দেবাশিস হালদার বলেছেন, তারা আন্দোলনের রাস্তা থেকে সরে আসছেন না। দরকার হলে তারা আবার সম্পূর্ণ কর্মবিরতিতে যাবেন। ২৭ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টের শুনানির দিকে নজর থাকবে বলেও তিনি জানিয়েছেন। দাবি পূরণ না হলে তারা আবার কর্মবিরতিতে যাবেন। অনিকেত হালদার বলেন, অভয়ার ন্যায়বিচার ও হাসপাতালে ভয়মুক্ত পরিবেশের জন্য আন্দোলন চলতে থাকবে।

আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, রাজ্যের অনেক এলাকা বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। সেদিকে লক্ষ্য রেখে বন্যা কবলিত এলাকায় বিশেষ স্বাস্থ্য শিবির খুলবে ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্ট। সুপ্রিম কোর্টে তাদের আইনি লড়াই চলবে। তেমনই তারা রাজপথে নেমে প্রতিবাদও জানাবেন। তবে এরিমধ্যে জুনিয়র ডাক্তারদের আরও কিছু দাবি মেনেছে রাজ্য সরকার।

মুখ্যসচিবের সঙ্গে বৈঠকের পর জুনিয়র ডাক্তাররা লিখিতভাবে তাদের দাবি মেইল করে জানানোর পরপরই জবাব দেয় সরকার। স্বাস্থ্যসচিব জানান, ডিউটি রুম, শৌচাগার, খাবার পানীয় ও সিসিটিভি নিয়ে মেডিকেল কলেজ সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা হবে। আর নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখতে কমিটি হয়েছে। কাজের জায়গায় যৌন হয়রানির অভিযোগসহ সব কমিটি বহাল রাখা হবে।

এদিকে আনন্দবাজার পত্রিকা জানিয়েছে, স্বাস্থ্য ভবনের সামনে অবস্থান তুলে নেয়া নিয়ে জুনিয়র ডাক্তারদের মধ্যে বিভিন্ন মত রয়েছে। একটি অংশ ‘হতাশ’। অনেকে তা গোপনও করছেন না। কর্মস্থলে নিরাপত্তা এবং সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য পরিষেবা ক্ষেত্রে ‘হুমকি সংস্কৃতি’ (থ্রেট কালচার) শেষ পর্যন্ত নির্মূল না হলে আবার নতুন উদ্যমে এই আন্দোলন শুরু করা যাবে কি না, তা নিয়েও দোলাচল কাজ করছে অনেকের মধ্যে।

আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসকদের বড় অংশ মনে করছে, হাসপাতালে চিকিৎসকদের নিরাপত্তা সংক্রান্ত পরিকাঠামো গঠনের যে দাবি তারা তুলেছিলেন, তা রাজ্য সরকার মেনে নিলেও ‘থ্রেট কালচার’ বন্ধ করা নিয়ে সে অর্থে কোনও ‘নিশ্চয়তা’ দেয়নি। জুনিয়র ডাক্তারদের প্রায় সব অংশই কাজে ফেরার বিষয়ে ‘ইতিবাচক’ মনোভাবের কথা বলেছিলেন।

অতিবৃষ্টির বন্যায় উড়িষ্যায় ১১ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুতঅতিবৃষ্টির বন্যায় উড়িষ্যায় ১১ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত কিন্তু একটি বড় অংশ চেয়েছিল, রাজ্য সরকারের থেকে নিরাপত্তা সংক্রান্ত এবং ‘থ্রেট কালচার’ বন্ধ করার বিষয়ে লিখিত প্রতিশ্রুতি আদায় করে নিতে। কিন্তু তা শেষ পর্যন্ত না করেই অবস্থান তুলে নিতে হচ্ছে বলে মত একটি অংশের। তাদের আরও বক্তব্য, কলকাতার পুলিশ কমিশনার বদল বা স্বাস্থ্য দপ্তরের দুই শীর্ষ কর্তাকে সরিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত জনমনে ‘জয়োল্লাস’ তৈরি করলেও কর্মক্ষেত্রে চিকিৎসকদের নিরাপত্তা সংক্রান্ত দাবিটিই মৌলিক। সেটিই এখনও পুরোপুরি মেটেনি।

মন্তব্য করুন