বৃহস্পতিবার, ২২শে মে, ২০২৫
৮ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২

পোষাকখাতে অস্থিরতাকারীদের কঠোর হুঁশিয়ারি

আদিলুর রহমান

অনলাইন ডেস্ক:

দেশের রফতানি আয়ের প্রধান খাত তথা অর্থনীতির প্রাণ পোশাক খাত। রাজনৈতিক অস্থিরতা কিংবা শ্রম অসন্তোষ রফতানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য যেন নিয়তি। তবে এতোদিন শ্রম অসন্তোষ হলেও তা সহজেই সমাধান হয়ে যেত। কিন্তু হঠাৎ করে এই খাতে শ্রম অসন্তোষ সৃষ্টিতে উঠে পড়ে লেগেছে তৃতীয় শক্তি বিশেষ করে পোশাক খাতের প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ ভারত। দিল্লিতে পলাতক শেখ হাসিনা অন্তর্বর্তী সরকারকে অচল করার সর্বশেষ ট্রাম্প কার্ড হিসেবে নিয়েছেন দেশের গার্মেন্টস শিল্পকে। এর আগে জুডিশিয়্যাল ক্যু, সংখ্যালঘু নির্যাতনের মিথ্যা প্রচারণা, ১৫ ও ২১ আগস্টে ঢাকায় ১০ লাখ লোকের সমাগম করে সরকারকে ফেলে দেওয়ার ষড়যন্ত্র, সরকারি কর্মচারীদের দাবি দাওয়ার আন্দোলনে রাস্তায় নামিয়ে বিশৃংখলা সৃষ্টি ও আনসার বাহিনী দিয়ে সচিবালয় ঘেরাও ষড়যন্ত্রে সফল হতে না পেরে এখন সর্বশেষ শ্রমিকদের দিয়ে বিশৃংখলা সৃষ্টি করে সরকার অচল করে দেয়ার অপচেষ্টায় নেমেছে।

শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি করে কারখানা বন্ধ ও উৎপাদন ব্যাহত করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে ফ্যাসিস্ট হাসিনার একটি চক্র। যাতে সময়মতো পণ্য বুঝে পেতে উদ্বেগ তৈরি হয় ব্র্যান্ড-ক্রেতাদের। ক্ষুণ্ন হয় দেশের ব্র্যান্ড ইমেজ। সর্বশেষ চলমান অস্থিরতা পোশাক খাতকে আরেক দফা বিপাকে ফেলেছে। অনেক ক্রেতা রফতানি আদেশ সরিয়ে নিচ্ছেন বাংলাদেশের বিকল্প দেশে। তবে এবার সোচ্চার হয়েছে সরকার থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট সবাই। ইতোমধ্যে অস্থিরতা তৈরির সঙ্গে জড়িত এক ছাত্রলীগ নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্যদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। তবে এ যাত্রায়ও স্বৈরাচার হাসিনা সফল হতে পারবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকার, মালিক, শ্রমিক ও সংশ্লিষ্ট স্টেক হোল্ডাররা। আর তাই এই শিল্পকে নিয়ে কোন ষড়যন্ত্র হলে তা কঠোরতার সঙ্গে দমন করা হবে বলে সম্মিলিত হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা। অন্তর্বর্তী সরকারের শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেছেন, রোববার দেশের সব তৈরি পোশাকশিল্প কারখানা খোলা থাকবে। কোনো কারখানায় অস্থিরতা তৈরি হলে বিশেষ ব্যবস্থা নেবে সরকার। দেশের অর্থনীতিকে বিপদে ফেলতে কেউ যদি কারখানা বন্ধ রাখার অপচেষ্টা করেন, সেটাও মনে রাখা হবে।

গতকাল রাজধানীর উত্তরায় অবস্থিত তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ ভবনে এক মতবিনিময় সভায় শিল্প উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। তৈরি পোশাক কারখানায় চলমান সঙ্কট ও উত্তরণের পথ নিয়ে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে বিজিএমইএ। সভাপতিত্ব করেন বিজিএমইএ সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার, শ্রম উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, শ্রম সচিব এইচ এম শফিকুজ্জামান, সেনাবাহিনীর নবম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল মো. মঈন খান, শিল্প পুলিশের প্রধান সিবগাতউল্লাহ, নিট পোশাক কারখানা মালিকদের আরেক সংগঠন বিকেএমইএ’র সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ প্রমুখ।

বাংলাদেশের প্রধান রফতানি খাত তৈরি পোশাকে শ্রমিক অসন্তোষের প্রেক্ষাপটে হামলা-ভাঙচুর অব্যাহত থাকলে এবার কারখানা বন্ধের হুঁশিয়ারি এসেছে তৈরি পোশাক শিল্প মালিক ও রফতানিকারক সমিতি- বিজিএমইএ’র পক্ষ থেকে। বিজিএমইএ সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম বলেন, সরকার নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেওয়ায় আজ রোববার সব পোশাক কারখানা খোলা থাকবে। তবে কোনো কারখানায় অস্থিরতা তৈরি হলে আগামী পরশু দিন থেকে সেই কারখানা শ্রম আইনের ১৩/১ ধারা (কাজ নেই, বেতন নেই) অনুযায়ী অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে। বিজিএমইএ সভাপতির এই বক্তব্যে উপস্থিত পোশাক মালিকরা একই অভিব্যক্তি পোষণ করেন। তিনি বলেন, রোববার কারখানা চালু রাখা হবে। তখন যদি কোনো কারখানায় হামলা, ভাঙচুর হয় শ্রমিকরা কাজে যোগ না দিলে আশুলিয়ার কারখানা মালিকেরা কারখানা বন্ধ করে দেবেন। তার এমন ঘোষণায় সমর্থন দিয়ে নিট পোশাক কারখানা মালিকদের আরেক সংগঠন বিকেএমইএ’র সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, বিকেএমইএ সংগঠন এই ঘোষণাকে সমর্থন দিলাম। ভাঙচুর হলে আশুলিয়ার কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হবে।

মন্তব্য করুন