বৃহস্পতিবার, ২২শে মে, ২০২৫
৮ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২

বিদ্যুৎ খাতের ‘মাফিয়া’ আলাউদ্দিন নাসিম ধরা ছোঁয়ার বাইরে

অনলাইন নিউজ: বিদ্যুৎ খাতে মাফিয়া সিন্ডিকেটের সদস্য হিসেবে অনেক নাম আলোচিত হলেও আলোচনার বাইরে রয়েছেন মূল হোতা। যার হাত ধরে দেশে গত সাড়ে ১৫ বছরে বেসরকারি বিদ্যুৎ খাতে মহালুটপাটের ঘটনা ঘটেছে সেই আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম রয়েছেন ধরা ছোঁয়ার বাইরে। পতিত শেখ হাসিনার ঘনিষ্টজন হওয়ায় বিনা পূজিতে ব্যবসায়িক পার্টনার হয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের প্রকল্প থেকে বিদেশে পাচার করেছেন হাজার হাজার কোটি টাকা।

ডাচ-বাংলা পাওয়ার অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেডের ৩০ শতাংশ শেয়ারের মালিক ফেনী-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম। শুধু বিদ্যুৎ প্রকল্পের নামে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে শত শত কোটি টাকা লোন নিয়ে বিদেশে পাচার করেন তিনি। জালিয়াতি ও মিথ্যা তথ্য দিয়ে ঋণ নেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

শেখ হাসিনার সাবেক প্রটোকল অফিসার আলাউদ্দিন নাসিম দেশটিকে বানিয়েছিলেন অনিয়ম ও দুর্নীতির ‘স্বর্গরাজ্য’। মিস্টার টোয়েন্টি পার্সেন্ট হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন দেশব্যাপী। তাকে ২০ পার্সেন্ট কমিশন না দিলে কোনো টেন্ডারই পেতো না ব্যবসায়ীরা। প্রকল্পের কাজ শুরুর আগেই তিনি বুঝে নিতেন তার কমিশনের টাকা। বিভিন্ন সময় দুর্নীতির কারণে অনেকেই ধরা পড়লেও সব সময় অন্তরালে থেকে যেতেন দুর্নীতির বরপুত্র খ্যাত আলাউদ্দিন নাসিম। শেখ হাসিনার ম্যানেজার হিসেবে ছিলেন বহাল তবিয়তে।

বিগত সরকারের আমলে প্রভাবশালী এই সাবেক এমপিকে ব্যবসায়িক পার্টনার বানিয়ে কোনো রকম টেন্ডার বা প্রতিযোগিতা ছাড়াই সরকারের কাছ থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের বড় বড় প্রকল্প বাগিয়ে নেন এক আলোচিত ব্যবসায়ী। তাকে সামনে রেখেই চালানো হয় লুটপাট। এসব কারণেই ফেনী-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিমের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের খোঁজে মাঠে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

সম্প্রতি দুদকে জমা পড়া একটি অভিযোগ থেকে জানা যায়, আওয়ামী লীগ ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই নাসিম হয়ে উঠেন অঘোষিত গডফাদার। চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে রাঘববোয়াল হিসেবে পরিচিতি পান তিনি। গত ১৭ বছরে তিনি অবৈধ উপায়ে গড়েছেন হাজার কোটি টাকার সম্পদের পাহাড়। তিনি সাবেক আমলা ও ১৩ বছর ছিলেন শেখ হাসিনার প্রটোকল অফিসার। শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত নাসিম চলতি বছরের জানুয়ারিতে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নৌকার প্রতীকে নির্বাচিত হন। তার বিরুদ্ধে এলাকায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী, বিএনপি নেতাকর্মী এবং জামায়াতের নেতাকর্মীদের জুলুম-নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে। রয়েছে দখল বাণিজ্য, চাঁদাবাজি এবং সরকারি টেন্ডার বাণিজ্য করে অবৈধ উপায়ে শত কোটি টাকা উপার্জনের অভিযোগ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের একটি সূত্র জানায়, সাবেক এমপি নাসিমের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত অর্থ-সম্পদের অভিযোগ করেছেন ফেনীর পশুরামের বাসিন্দা মঈন আহমেদ নামে এক ব্যক্তি। অভিযোগের ভিত্তিতে দুদক অর্থ-সম্পদের খোঁজে কাজ করছে। গত ৯ আগস্ট দুদকে জমা দেওয়া ওই অভিযোগ থেকে জানা যায়, হাসিনা সরকারের নৌকা প্রতীকের টিকেট নিয়ে ফেনী-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন আলাউদ্দিন নাসিম। ছিলেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সদস্য। ছাত্রলীগের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি হিসেবে তিনি ছিলেন চট্টগ্রাম বিভাগ আওয়ামী লীগের অভিভাবক। তার সক্রিয় ভূমিকায় চলত বৃহত্তর নোয়াখালী ও চট্টগ্রামের প্রশাসন। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর অন্য মন্ত্রী-এমপিদের মতো আলাউদ্দিন নাসিমও আত্মগোপনে চলে যান।

রাজধানীর অভিজাত গুলশান এলাকায় রয়েছে আলাউদ্দিন নাসিমের মদের গুদাম। এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় মদের গুদাম বলে আলোচিত। এ ছাড়া বিভিন্ন ক্লাব থেকে সদস্যদের জন্য কম দামে কেনা মদ তিনি বেশি দামে বিক্রি করেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। স্থানীয়দের মতে, এমপি ও তার পরিবারের সদস্যদের দেশ-বিদেশে নামে-বেনামে রয়েছে হাজার কোটি টাকার অর্থ-সম্পদ। এ ছাড়াও কানাডায় রয়েছে বাড়ি-গাড়ি। মেয়ে রাকা চৌধুরী এখনও কানাডায় অবস্থান করছেন।

মন্তব্য করুন