বৃহস্পতিবার, ২২শে মে, ২০২৫
৮ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২

ভারতে থানায় সেনা কর্মকর্তার হবু স্ত্রীকে ‘যৌন নির্যাতন’

অনলাইন ডেস্ক: ভারতের ওড়িশা রাজ্যের ভূবনেশ্বরে থানায় এক সেনা কর্মকর্তার হবু স্ত্রীকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। নির্যাতন করেছে ওই থানারই কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা। এ ঘটনায় থানার অফিসার ইনচার্জসহ ৫ জন পুলিশকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তবে কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবিতে বিক্ষোভ করছেন নারী অধিকারকর্মীরা।

হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদন মতে, এ ঘটনাকে ‘মর্মান্তিক’ অভিহিত করে বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়েছেন ওড়িশার সাবেক মুখ্যমন্ত্রী এবং বিজু জনতা দলের সভাপতি নবীন পাটনায়েক।

শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) এক এক্স বার্তায় তিনি বলেন, সম্প্রতি ভুবনেশ্বরের একটি পুলিশ স্টেশনে একজন সেনা মেজর ও তার বাগদত্তার সাথে যা ঘটেছে তা সকলেই শুনেছেন। এটা খুব মর্মান্তিক খবর। আমরা এই বিষয়ে সম্পূর্ণ বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করছি।

নির্যাতিতা নারী অর্থাৎ সেনা কর্মকর্তার হবু স্ত্রী পেশায় একজন আইনজীবী। পাশাপাশি ভূবনেশ্বরে তিনি একটি রেস্তোঁরা চালান। বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) থানায় নিজের ওপর হওয়া যৌন নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, গত রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) মধ্যরাতে রেস্তোঁরা বন্ধ করার একটু পরই একদল লোক তিনি ও তার হবু স্বামীর পথরোধ করে এবং তাদের সাথে মারামারি শুরু করে।

ওই নারী জানান, ওই লোকগুলোর হাত থেকে কোনোরকমে পালাতে সক্ষম হন তারা এবং বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ জানাতে ভূবনেশ্বরের ভরতপুর থানায যান। কিন্তু থানায় একজন নারী পুলিশ ছাড়া আরও কেউ ছিল না। ওই নারী পুলিশকেউ অভিযোগ নথিভূক্ত করার অনুরোধ করেন তারা। কিন্তু অভিযোগ নথিভূক্ত করার বদলে তাদের সাথে দুর্ব্যবহার করেন।

ওই নারীর কথায়, আমি জানি না কি হল। তারা আমার হবু স্বামীকে লকআপে ভরল। যখন আমি প্রতিবাদ করলাম যে তারা একজন সেনা অফিসারকে পুলিশ হেফাজতে রাখতে পারে না। এটা বেআইনি। তখন দুই নারী অফিসার আমাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করতে শুরু করে।

এরপর তিনি নিজেকে একজন আইনজীবী হিসেবে পরিচয় দেন বলে জানান। কিন্তু এতে ওই নারী কনস্টেবল রেগে যান এবং তার সঙ্গে আরও দুর্ব্যবহার করেন। তার ভাষায়, ‘এরই মধ্যে, পুলিশের একটি টহল গাড়ি থানায় প্রবেশ করে। তারপর দুই নারী অফিসার আমার চুল টেনে ধরে মারতে শুরু করে।

‘আমি তাদের থামতে অনুরোধ করলে তারা আমাকে থানার করিডোর দিয়ে টেনে নিয়ে যায়। যখন তাদের একজন আমাকে টুটি চেপে ধরার চেষ্টা করছিল, আমি তার হাত কামড় দিই। এরপর তারা আমার জ্যাকেট খুলে ফেলে এবং এর সাথে আমার উভয় হাত বেঁধে দেয় এবং তারা একটি স্কার্ফ ব্যবহার করে আমার উভয় পা বেঁধে আমাকে একটি ঘরে ফেলে দেয়’, যোগ করেন তিনি।

ভুক্তভোগী বলেন, এরপর একজন পুরুষ অফিসার এসে আমার ব্রা খুলে একটানা আমার বুকে লাথি মারতে থাকে। তারপর থানার ইন্সপেক্টর এসে তার ট্রাউজারের জিপ খুলে ফেলে এবং আমাকে তার পুরুষাঙ্গ দেখায় এবং আমাকে তার সাথে শারীরিক সম্পর্কের জোর করতে থাকে। সে আমার শ্লীলতাহানিও করেন।

থানায় কয়েকজন পুলিশের প্রচণ্ড মারে গুরুতর আহত হন ওই নারী। তার চোয়াল সরে যায়। চিকিৎসা দিতে তাকে ভূবনেশ্বরের এআইআইএমএস হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এতসব নির্যাতনের পরও পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়।

তবে ওড়িশা হাইকোর্টের নির্দেশে বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) তাকে জামিনে মুক্তি দেয়া হয়। মুক্তি পাওয়ার পর এদিন তিনি ও তার হবু স্বামী ভরতপুর থানায় কয়েকজন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের করেন।

এরপর বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমকে পুরো বিষয়টি জানান ওই নারী। তিনি বলেন, নিজেদের বাঁচাতেই পুলিশ সদস্যরা তাকে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করে। সেনা কর্মকর্তা জানান, তাকে ভোর ৩টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত লকআপে বেআইনিভাবে আটকে রাখে। তার হবু স্ত্রীকে শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে। ৩০ মিনিট ধরে আমি তার চিৎকার শুনতে পেয়েছি।

মন্তব্য করুন

ভারতে থানায় সেনা কর্মকর্তার হবু স্ত্রীকে ‘যৌন নির্যাতন’

মন্তব্য করুন