
অনলাইন ডেস্ক: এক যুগ আগেও ছিলেন বেকার। অথচ এখন তিনি হাজার কোটি টাকার মালিক। বর্তমানে গাড়ি-বাড়ি-ফ্ল্যাট সবই আছে তার। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের ছত্র-ছায়ায় কমিশন বাণিজ্য করে, বিপুল সম্পদের মালিক বনে গেছেন নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার সৈয়দ আহসান উদ্দিন আহমেদ সায়মুম। যদিও তিনি কামালের ক্যাশিয়ার হিসেবে রাজধানীতে বেশি পরিচিত।
ফতুল্লার লালপুর এলাকার সৈয়দ নরুদ্দিন খুশির দ্বিতীয় সন্তান সৈয়দ আহসান উদ্দিন আহমেদ সায়মুম। একসময় বাবার সিমেন্টের দোকানের ব্যবসা দেখাশোনা করতেন। পরবর্তীতে সেখান থেকে ঢাকায় একটি মোটরসাইকেল শো রুমে মাত্র ২০ হাজার টাকা বেতনে চাকরি নেন। সেই শো রুমের মোটরসাইকেল কেনা-বেচার করতে গিয়ে সম্পর্ক গড়ে উঠে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পিএস মনিরের সঙ্গে। এরপর ধীরে ধীরে ঘনিষ্ঠতা গড়ে তুলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গেও। এমনকি সায়মুমের শ্যালিকার বিয়েতেও দেখা গেছে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামালকে। তার পারিবারিক অনুষ্ঠানে আসা-যাওয়া ছিলো সাবেক আইজিপি বেনজীরেরও। আর সেই সুযোগ, কাজে লাগিয়ে বেকার সায়মুম এখন হয়ে গেছেন ধনকুবের।

অভিযোগ রয়েছে, নিয়োগ ও বদলি বাণিজ্য, রাশিয়া থেকে গম ও বিমানসহ বিভিন্ন কেনাকাটার মধ্যস্থতায় কমিশন নিয়ে অঢেল টাকার মালিক বনেছেন সায়মুম। একই সঙ্গে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামালের বিভিন্ন সেক্টরের কমিশনের অর্থ সংগ্রহ করতো সে। এরপর সেই অর্থ বিদেশে পাচার করতো তার শ্যালক আসিফের মাধ্যমে। তার সঙ্গে সাবেক মন্ত্রী-এমপি ও সচিবের সখ্যতা থাকায় সব জেনেও ভয়ে এতোদিন প্রতিবাদ করতে পারেনি স্থানীয়রা। দেশটিভির অনুসন্ধানে বেড়িয়ে এসেছে, ঢাকার অভিজাত এলাকা গুলশান ও উত্তরাতে একাধিক আলিশান ফ্ল্যাট রয়েছে সায়মুমের। পাশাপাশি রাজধানীর একটি অভিজাত হোটেলের শেয়ারসহ কক্সবাজার থাকা সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামালের ৫ তারকা হোটেলের মালিকানাতেও আছে তার নাম। নিজ এলাকা ফতুল্লাতে গড়ে তুলেছেন আলিশান ভবন। রয়েছে কয়েকটি জমিও। চলাফেরা করেন দামি ব্রান্ডের গাড়িতে। রাজধানীর বোটক্লাব-গুলশান ক্লাবসহ বিভিন্ন ক্লাবের সদস্যও হয়েছেন তিনি।
দেশ ছাড়িয়ে দুবাইসহ বিভিন্ন দেশে গড়ে তুলেছেন ব্যবসায়িক খাত। এমনকি তার ভাই মাসুমসহ সায়মুমের শ্বশুড় বাড়ীর লোকজনের নামেও রয়েছে বহু সম্পদ। যদিও এসব বিষয়ে জানতে সায়মুমের ফতুল্লা বাড়িতে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। আর মুঠোফোন ছিলো বন্ধ। গেল ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করলে আত্মগোপনে চলে যান সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল। আর দূর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত সাবেক আইজিপি দেশ ছেড়েছেন আরও আগেই। তবে ধরা ছোয়ার বাইরেই থেকে গেছে সায়মুমসহ অন্যরা। তাদেরকে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনের নেতারা।

সাবেক এমপি-মন্ত্রীদের ছত্রছায়ায় দুর্নীতি করে বিপুল সম্পদের মালিক বনে যাওয়া সায়মুমদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চালিয়ে আইনী ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়ছে দুর্নীতি দমন কমিশন দুদক।
রাজনৈতির প্রভাবে অনিয়ম-দুর্নীতি করে টাকার কুমির বনে যাওয়া সায়মুমসহ তার সহযোগিদের আইনের আওতায় আনা গেলে বেড়িয়ে আসবে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামালের অবৈধ সম্পদের আরও তথ্য। তাই আত্মগোপনে থাকা এমন সায়মনদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনার দাবি স্থানীয়দের।
